মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের মেরাজের কাহিনী
মদীনায় হিজরত ৩৯২ বার পঠিত মন্তব্য করুন
নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের সাফল্য এবং তাঁর এবং ইসলামের অনুসারীদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন মাঝামাঝি পর্যায়ে চলছিলো, দুর
দিগন্তে মিটিমিটি জ্বলছিল তারার আলো, এমনি সময়ে মেরাজের রহস্যময় ঘটনা ঘটলো। এই মেরাজ কবে সংঘটিত হয়েছিলো ? এ সম্পর্কে সীরাত রচয়িতাদের
মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন-
(এক) তিবরানী বলেছেনঃ যে বছর রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবুয়ত দেয়া হয় সে বছরই।
(দুই) ইমাম নববী ও ইমাম কুরতবী লিখেছেনঃ নবুয়তের পাঁচ বছর পর।
(তিন) হিজরতের ষোল মাস আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের দ্বাদশ বছরে রমযান মাসে।
(চার) নবুয়তের দশম বর্ষের ২৭শে রজব। আল্লামা মুনসুরী এ অভিমত গ্রহণ করেছেন।
(পাঁচ) হিজরতের আগে এক বছর দুই মাস আগে, অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের মহররম মাসে।
(ছয়) হিজরতের এক বছর আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের রবিউল আউয়াল মাসে।
উল্লেখিত বক্তব্য সমুহের মধ্যে তিনটি বক্তব্যকে সঠিক বলে মেনে নেয়া যায়। পাঞ্জেগানা নামাজ ফরজ হওয়ার আগে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর ইন্তেকাল হয়েছিল আর এ
ব্যাপারে সবাই একমত যে, পাঞ্জাএগানা নামাজ মেরাজের রাতে ফরজ করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে যে, হযরত খাদিজার মৃত্যু মেরাজের আগে হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু নবুয়তের দশম
মাসের রমজান মাসে হয়েছিল বলে জানা যায়। কাজেই মেরাজের ঘটনা এর পরেই ঘটেছে আগে নয়। শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনটিকে কোনটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মত,
তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোরআন হাদীসে বর্ণিত এ সম্পর্কিত বিবরণ উল্লেখ করব।
ইবনে কাইয়েম লিখেছেন, সঠিক বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায় যে, নবী সাইয়্যেদুল মুরসালিনকে স্বশরীরে বোরাকে তুলে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর সঙ্গে মসজিদে হারাম
থেকে প্রথমে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমন করানো হয়। প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে মসজিদের দরজার খুঁটির সাথে বোরাক
বেঁধে যাত্রা বিরতি করেন এবং সকল নবীর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন।
এরপর সে রাতেই তাঁকে বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে প্রথম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আদম (আ) কে দেখে সালাম করেন।
হযরত আদম (আ) তাঁকে মারহাবা বলে সালামের জবা দেন। তাঁর নবুয়তের স্বীকারোক্তি করেন। সে সময় আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ) এর ডানদিকে নেককার ও
বামদিকে পাপীদের রুহ রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখান। এরপর তিনি দ্বিতীয় আসমানে যান। দরজা খুলে দেওয়া হয়। প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আঃ) এবং হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) কে দেখে সালাম করেন। তাঁরা সালামের জবাব দিয়ে প্রিয়
নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের কথা স্বীকার করেন। রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর যান চতুর্থ আসমানে।
সেখানে তিনি হযরত ইদ্রিস (আঃ) দেখে সালাম করেন। তিনি সালামের জবাবে মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
এরপর তাঁকে পঞ্চম আসমানে নেয়া হয়। সেখানে তিনি হযরত হারুন (আ) দেখে সালাম দেন। তিনি সালামের জবাবে মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর নেয়া ষষ্ঠ আসমানে। সেখানে হযরত মুসা ( আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি সালাম করেন। হযরত মুসা (আঃ)
মারহাবা বলেন এবং নবুয়তের কথা স্বীকার করেন। নবী মুরসালিন সামনে অগ্রসর হলেন, এ সময় হযরত মুসা কলিমুল্লাহ (আঃ) কাঁদতে লাগলেন। এর কারণ
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, একজন নবী যিনি আমার পরে আর্বিভুত হয়েছেন তাঁর উম্মতেরা আমার উম্মতের চেয়ে বেশী সংখ্যায় বেহেশতে যাবে।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এরপর নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তম আসমানে। সেখানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সাথে তাঁর দেখা হয়। তিনি তাঁকে সালাম করেন।
তিনি জবাব দেন, মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
এবার প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আল্লাহর এত কাছাকাছি পৌঁছেন যে, উভয়ের
মধ্যে দুটি ধনুক বা তারও কম ব্যবধান ছিলো। সেই আল্লাহ রহমানুর রহিম তাঁর যা কিছু দেবার দিয়ে দেন, যা ইচ্ছা ওহী নাযিল করেন এবং পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।
ফেরার পথে হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে দেখা হলে, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে কি কাজের আদেশ দিয়েছেন ? নবী করিম সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মত এত নামাজ আদায় করার শক্তি রাখে না।
আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে নামাজ কমিয়ে দেয়ার আবেদন করুন। আকায়ে নামদার তাজেদারে মদীনা প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ)
এর দিকে তাকালেন, তিনি ঈশারা করলেন। এরপর ফিরে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমিয়ে দেবার আবেদন করলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে ফেরার পথে আবার দেখা,
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর কাছ থেকে কি আদেশ নিয়ে যাচ্ছেন ? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাজের কথা বললেন। হযরত মুসা (আঃ)
বললেন, আপনি ফিরে যান এমনি করে বার বার ফিরে যাওয়ার এবং নামাজ কম করার হার এক পর্যায়ে সংখ্যা দাড়ালো পাঁচ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও হযরত মুসা (আঃ)
বেশী মনে করলেন এবং আরো কমিয়ে আনার আবেদন জানানোর জন্য ফিরে যেতে বললেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার
ভীষন লজ্জা লাগছে, আমি আর যেতে চাই না। আমি আল্লাহর এ আদেশের উপরই মাথা নত করলাম। ফেরার পথে কিছুদুর আসার পর আওয়াহ হলো, আমি আমার ফরজ
নির্ধারণ করে দিয়েছি এবং আমার বান্দাদের জন্য কমিয়ে দিয়েছি।
আল্লামা ইবনে কাইয়েম এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষন করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আল্লাহ কে দেখেছেন ? ইমাম
ইবনে তাইমিয়া লিখেছেন, চোখে দেখার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কোন সাহাবী একথা বর্ণনাও করেননি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) চোখ এবং অন্তর দ্বারা দেখার
যে কথা উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম বর্ণনা দ্বিতীয় বর্ণনার বিপরীত নয়। ইমাম ইবনে কাইয়েম যে নৈকট্য এবং নিকটতর হওয়ার হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন,
এটি মেরাজের সময়ের চেয়ে ভিন্ন সময়ের কথা। সূরা নাজম এ হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর নৈকট্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) সেই কথাই বর্ণনা করেছেন।
পক্ষান্তরে মে’রাজের হাদিসে যে নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, এটা আল্লাহরই নৈকট্য। সূরা নাজম এ সম্পর্কে কোন ব্যাপক
আলোচনা নেই। বরং সেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বিতীয়বার “ সেদরাতুল মুনতাহা”র কাছে দেখেছেন। যাঁকে দেখেছেন তিনি জিব্রাঈল
(আঃ)। নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে তার আসল চেহারায় দু’বার দেখেছেন। একবার পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার “সেদরাতুল মুনতাহা’র
কাছে।
এ সময়েও প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “শাককুস সদর” বা সিনাচাকের ঘটনা ঘটেছিল। এ সফরের সময় তাকে কয়েকটি জিনিস দেখানো হয়েছিল। তাঁকে দুধ
এবং মদ দেয়া হয়েছিল। তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। এটা দেখে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনাকে ফেতরাত বা স্বভাবের ফল দেখানো হয়েছে। যদি আপনি মদ গ্রহণ
করতেন তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।
আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি নহর দেখলেন। চারটি যাহেরী, আর চারটি বাতেনী। প্রকাশ্য নহর ছিল নীল এবং ফোরাত। এর তাৎপর্য সম্ভবত এই
যে, তার রেসালাত নীল এবং ফোরাত সজীব এলাকা সমূহে বিস্তার লাভ করবে। অর্থ্যাৎ এখানের অধিবাসিরা বংশ পরস্পরায় মুসলমান হবে। এমন নয় যে, এ দুটি নহরের পানির
উৎস জান্নাতে রয়েছে।
জাহান্নামের দারোগা মালেককে তিনি দেখলেন, তিনি হাসেন না, তার চেহারায় হাসি খুশির কোন ছাপও নেই। আল্লাহর রসুলকে বেহেশত ও দোজখ দেখানো হল।
এতিমের ধন-সম্পদ যারা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের অবস্থাও দেখানো হলো। তাদের ঠোঁট ছিলো উঁটের ঠোটের মত।
তারা নিজেদের মুখে পাথরের টুকরার মত মত অঙ্গার প্রবেশ করাচ্ছে আর সেই অঙ্গার তাদের গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোরদেরও দেখেছিলেন । তাদের ঠোঁট এতবড় ছিল যে, তারা নাড়াচাড়া করতে পারছিল না। ফেরাউনের অনুসারীদের
জাহান্নামে নেয়ার সময় তারা এসব সুদখোরকে মাড়িয়ে যাচ্ছিল।
যেনা কারীদেরও তিনি দেখেছিলেন। তাদের সামনে তাজা গোশত এবং দুর্গন্ধময় পঁচা গোশত ছিল, অথচ তারা তাজা গোশত রেখে পঁচা গোশত খাচ্ছিল।
যেসব নারী স্বামী থাকা সত্তেও নিজ গর্ভে অণ্যের সন্তার ধারন করেছিল, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরও দেখেছিলেন। নবী সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম লক্ষ্য করলেন যে, ওই সব মহিলার বুকে বড় বড় কাঁটা বিধিয়ে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি মক্কার একটি কাফেলাকে দেখেছিলেন। সেই কাফেলার একটি উট পালিয়ে গিয়েছিলতিনি তাদেরকে সেই উটের সন্ধান বলে দিয়েছিলেন। ঢেকে রাখা পাত্রে পানি ছিলো,
তিনি সেই পানি থেকে পান করেছিলেন। সে সময় কাফেররা সকলে ঘুমাচ্ছিল। মেরাজের রাতের পরদিন সকালে এই বিবরণ তাঁর দাবীর সত্যতার একটি প্রমাণ হয়েছিলো।
বলে দিলেন অমুক সময়ে সে কাফেলা ফিরে আসবে। কাফেলা থেকে পালিয়ে যে উটটি মক্কায় ফিরে আসছিলো তিনি সে উটটির বিবরণও পেশ করলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সব
কথাই সত্য প্রমাণিত হয়। কিন্ত এতকিছু সত্তেও কাফেরদের ঘৃনা আরও বেড়ে গেল এবং তারা তাঁর কথা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালো।
বলা হয়, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে নবীজি সেই সময় সিদ্দিক উপাধি দিয়েছিলেন। কেননা অন্য সবাই যখন অবিশ্বাস করছিলো, তিনি তখন সব কিছুই বিশ্বাস
করেছিলেন।
মেরাজের বিবরণ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করিমে উল্লেখ করেছেন।
নবীদের ব্যাপারে এটাই হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা বলেন,”এবং এভাবেই আমি ইব্রাহিমকে আসমান জমিনের রাজ্য ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি যাতে,
সে বিশ্বাসীদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়।“
আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা (আঃ) কে বলেছিলেন, “তাহলে আমি তোমাকে আমার বড় কিছু নিদর্শন দেখাব।“
এসব দেখানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা যেন বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। এ কথাও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। নবীরা আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সরাসরি প্রত্যক্ষ করায়
তাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। ফলে তারা আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে গিয়ে এমন সব দুঃখ এবং কষ্ট নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে পারেন, যা অন্য
কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের দৃষ্টিতে পার্থিব জগতের যাবতীয় শক্তিই মনে হয় তুচ্ছ। এ কারণে তারা কোন শক্তিকেই পরোয়া করেন না। মেরাজের ঘটনায় ছোট খাট বিষয়
এবং এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে শরীয়তের বড় বড় কিতাবে আলোচনা রয়েছে। তা হতে প্রধান প্রধান কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, আল্লাহ তাআলা কোরআনে মাত্র একটি আয়াতে মেরাজের ঘটনা উল্লেখ করেই ইহুদিদের দুস্কৃতির কথা বর্ণনা করেছেন। এরপর তাদের
জানিয়েন যে, এই কোরআন সেই পথেরই হেদায়াত দিয়ে থাকে, যে পথ সঠিক এবং সরল। কোরআন পাঠকারীদের মনে হতে পারে যে, উভয় কথা সম্পর্কহীন, কিন্ত
আসলে তা নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বর্ণনা ভঙ্গিতে এই ইশারাই দিয়েছেন যে, এখন থেকে ইহুদিদের মানব জাতির নেতৃত্বের আসন থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। কেননা এসব
ইহুদী এমন ভয়াবহ অপরাধ করেছে যে, নেতৃত্বের যোগ্যতা তাদের আর নেই। কাজেই এই দায়িত্ব ও মর্যাদা এখন থেকে মহা নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রদান
করা হবে এবং দুঃসাহসী দাওয়াতের উভয় কেন্দ্রকে তাঁর নিয়ন্ত্রানাধীন করা হবে। জুলুম, অত্যাচার এবং বিশ্বাসঘাতকতায় কলন্কিত ইতিহামের অধিকারী একটি উম্মতের কাছ
থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে এমন একটি উম্মতকে দেয়া হবে, যাদের মাধ্যমে কল্যাণের ঝর্ণাধারা উৎসারিত হবে। এই উম্মতের পয়গম্বর ওহীর মাধ্যমে কোরআনে করিম
পেয়েছেন। এই কোরআন মানব জাতিকে সর্বাধিক হেদায়েত দান করেছে।
কিন্ত এই নেতৃত্বের পূর্ণতা কিভাবে সাধিত হবে ? ইসলামের নবীতো মক্কার পাহাড়ে লোকদের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটি একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্ন অন্য একটি সত্যের
পর্দা উম্মোচন করেছে। ইসলামের দাওয়াত একটা পর্যায় অতিক্রম করার কাছে পৌঁছেছে, বর্তমানে অণ্য একটি পর্য়ায় প্রবেশ করবে। এই ধারেআ হবে অন্য
ধারা থেকে ভিন্ন। এ কারণে দেখা যায় যে, কোন কোন আয়াতে পৌত্তলিকদের সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং কঠোর হুমকি দেয়া হয়েছে।আল্লাহ
তাআলা বলেন, আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের সৎকাজ করতে আদেশ করি, কিন্ত তারা সেখানে অসৎ কাজ করে। তারপর তাদের
প্রতি দন্ড প্রদান ন্যায় সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমি সেটা সম্পুর্ণরুপে বিধ্বস্ত করি। (সূরা বনী ইসরাঈল-১৬)
আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরায় আরো বলেন, নূহের পর আমি কত মানব গোষ্টিকে ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালক ই তার বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ
রাখা এবং পর্যবেক্ষনের জন্য যথেষ্ঠ।(সূরা বনী ইসরাঈল-১৭)
এ সকল আয়াতের পাশাপাশি এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যাতে মুসলমানদের ভবিষ্যত ইসলামি সমাজের রুপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। তারা এমন এক ভু-খন্ডে নিজেদের
ঠিকানা তৈরী করেছে, যেখানে সব কিছু তাদের নিজের হাতে ন্যস্ত। উল্লেখিত আয়াতে এমন ইশারা রয়েছে যে, আল্লাহর রসুল হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম শীঘ্রই এমন নিরাপদ জায়গা পেয়ে যাবেন, যেখানে দ্বীন ইসলাম যথাযথভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করবে।
মেরাজের রহস্যময় ঘটনার এমন সব বিষয় রয়েছে, যার সাথে আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সম্পর্ক সরাসরি বিদ্যমান। এ কারণে সেসব বর্ণনা করা দরকার। আমরা এ
সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে, মে’রাজের ঘটনা হয়তো বাইয়াতে আকাবার কিছুকাল আগে ঘটেছিল অথবা প্রথম ও দ্বিতীয় আকাবার মাঝামাঝি সময় ঘটেছিল। আল্লাহ
তাআলাই সব কিছু ভাল জানেন।
মদীনায় হিজরত ৩৯২ বার পঠিত মন্তব্য করুন
নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের দাওয়াত ও তাবলীগের সাফল্য এবং তাঁর এবং ইসলামের অনুসারীদের প্রতি অত্যাচার নির্যাতন মাঝামাঝি পর্যায়ে চলছিলো, দুর
দিগন্তে মিটিমিটি জ্বলছিল তারার আলো, এমনি সময়ে মেরাজের রহস্যময় ঘটনা ঘটলো। এই মেরাজ কবে সংঘটিত হয়েছিলো ? এ সম্পর্কে সীরাত রচয়িতাদের
মধ্যে মতবিরোধ রয়েছে। যেমন-
(এক) তিবরানী বলেছেনঃ যে বছর রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে নবুয়ত দেয়া হয় সে বছরই।
(দুই) ইমাম নববী ও ইমাম কুরতবী লিখেছেনঃ নবুয়তের পাঁচ বছর পর।
(তিন) হিজরতের ষোল মাস আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের দ্বাদশ বছরে রমযান মাসে।
(চার) নবুয়তের দশম বর্ষের ২৭শে রজব। আল্লামা মুনসুরী এ অভিমত গ্রহণ করেছেন।
(পাঁচ) হিজরতের আগে এক বছর দুই মাস আগে, অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের মহররম মাসে।
(ছয়) হিজরতের এক বছর আগে অর্থ্যাৎ নবুয়তের ত্রয়োদশ বর্ষের রবিউল আউয়াল মাসে।
উল্লেখিত বক্তব্য সমুহের মধ্যে তিনটি বক্তব্যকে সঠিক বলে মেনে নেয়া যায়। পাঞ্জেগানা নামাজ ফরজ হওয়ার আগে হযরত খাদিজা (রাঃ) এর ইন্তেকাল হয়েছিল আর এ
ব্যাপারে সবাই একমত যে, পাঞ্জাএগানা নামাজ মেরাজের রাতে ফরজ করা হয়। এর অর্থ হচ্ছে যে, হযরত খাদিজার মৃত্যু মেরাজের আগে হয়েছিল। তাঁর মৃত্যু নবুয়তের দশম
মাসের রমজান মাসে হয়েছিল বলে জানা যায়। কাজেই মেরাজের ঘটনা এর পরেই ঘটেছে আগে নয়। শেষোক্ত তিনটি বক্তব্যের কোনটিকে কোনটির উপর প্রাধান্য দেয়ার মত,
তার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি। কোরআন হাদীসে বর্ণিত এ সম্পর্কিত বিবরণ উল্লেখ করব।
ইবনে কাইয়েম লিখেছেন, সঠিক বর্ণনা অনুযায়ী জানা যায় যে, নবী সাইয়্যেদুল মুরসালিনকে স্বশরীরে বোরাকে তুলে হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর সঙ্গে মসজিদে হারাম
থেকে প্রথমে বাইতুল মোকাদ্দাস পর্যন্ত ভ্রমন করানো হয়। প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে মসজিদের দরজার খুঁটির সাথে বোরাক
বেঁধে যাত্রা বিরতি করেন এবং সকল নবীর ইমাম হয়ে নামাজ আদায় করেন।
এরপর সে রাতেই তাঁকে বাইতুল মোকাদ্দাস থেকে প্রথম আসমানে নিয়ে যাওয়া হয়। রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত আদম (আ) কে দেখে সালাম করেন।
হযরত আদম (আ) তাঁকে মারহাবা বলে সালামের জবা দেন। তাঁর নবুয়তের স্বীকারোক্তি করেন। সে সময় আল্লাহ তাআলা হযরত আদম (আ) এর ডানদিকে নেককার ও
বামদিকে পাপীদের রুহ রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দেখান। এরপর তিনি দ্বিতীয় আসমানে যান। দরজা খুলে দেওয়া হয়। প্রিয় নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম সেখানে হযরত ইয়াহিয়া ইবনে যাকারিয়া (আঃ) এবং হযরত ঈসা ইবনে মরিয়ম (আঃ) কে দেখে সালাম করেন। তাঁরা সালামের জবাব দিয়ে প্রিয়
নবী রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের নবুয়তের কথা স্বীকার করেন। রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর যান চতুর্থ আসমানে।
সেখানে তিনি হযরত ইদ্রিস (আঃ) দেখে সালাম করেন। তিনি সালামের জবাবে মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
এরপর তাঁকে পঞ্চম আসমানে নেয়া হয়। সেখানে তিনি হযরত হারুন (আ) দেখে সালাম দেন। তিনি সালামের জবাবে মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরপর নেয়া ষষ্ঠ আসমানে। সেখানে হযরত মুসা ( আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ হয়। তিনি সালাম করেন। হযরত মুসা (আঃ)
মারহাবা বলেন এবং নবুয়তের কথা স্বীকার করেন। নবী মুরসালিন সামনে অগ্রসর হলেন, এ সময় হযরত মুসা কলিমুল্লাহ (আঃ) কাঁদতে লাগলেন। এর কারণ
জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বললেন, একজন নবী যিনি আমার পরে আর্বিভুত হয়েছেন তাঁর উম্মতেরা আমার উম্মতের চেয়ে বেশী সংখ্যায় বেহেশতে যাবে।
রসুলুল্লাহ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কে এরপর নিয়ে যাওয়া হয় সপ্তম আসমানে। সেখানে হযরত ইব্রাহিম (আঃ) এর সাথে তাঁর দেখা হয়। তিনি তাঁকে সালাম করেন।
তিনি জবাব দেন, মোবারকবাদ দেন এবং তাঁর নবুয়তের কথা স্বীকার করেন।
এবার প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সেদরাতুল মুনতাহায় নিয়ে যাওয়া হয়। তিনি আল্লাহর এত কাছাকাছি পৌঁছেন যে, উভয়ের
মধ্যে দুটি ধনুক বা তারও কম ব্যবধান ছিলো। সেই আল্লাহ রহমানুর রহিম তাঁর যা কিছু দেবার দিয়ে দেন, যা ইচ্ছা ওহী নাযিল করেন এবং পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ ফরজ করেন।
ফেরার পথে হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে দেখা হলে, তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহ তাআলা আপনাকে কি কাজের আদেশ দিয়েছেন ? নবী করিম সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, পঞ্চাশ ওয়াক্ত নামাজ আদায়ের আদেশ দিয়েছেন। হযরত মুসা (আঃ) বললেন, আপনার উম্মত এত নামাজ আদায় করার শক্তি রাখে না।
আপনি আল্লাহর কাছে ফিরে গিয়ে নামাজ কমিয়ে দেয়ার আবেদন করুন। আকায়ে নামদার তাজেদারে মদীনা প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ)
এর দিকে তাকালেন, তিনি ঈশারা করলেন। এরপর ফিরে গিয়ে নামাজের সংখ্যা কমিয়ে দেবার আবেদন করলেন। হযরত মুসা (আঃ) এর সাথে ফেরার পথে আবার দেখা,
তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, আল্লাহর কাছ থেকে কি আদেশ নিয়ে যাচ্ছেন ? নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম পয়তাল্লিশ ওয়াক্ত নামাজের কথা বললেন। হযরত মুসা (আঃ)
বললেন, আপনি ফিরে যান এমনি করে বার বার ফিরে যাওয়ার এবং নামাজ কম করার হার এক পর্যায়ে সংখ্যা দাড়ালো পাঁচ। এই পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ ও হযরত মুসা (আঃ)
বেশী মনে করলেন এবং আরো কমিয়ে আনার আবেদন জানানোর জন্য ফিরে যেতে বললেন। প্রিয় নবী হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, আমার
ভীষন লজ্জা লাগছে, আমি আর যেতে চাই না। আমি আল্লাহর এ আদেশের উপরই মাথা নত করলাম। ফেরার পথে কিছুদুর আসার পর আওয়াহ হলো, আমি আমার ফরজ
নির্ধারণ করে দিয়েছি এবং আমার বান্দাদের জন্য কমিয়ে দিয়েছি।
আল্লামা ইবনে কাইয়েম এ ব্যাপারে ভিন্ন মত পোষন করেছেন। তিনি প্রশ্ন তুলেছেন যে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কি আল্লাহ কে দেখেছেন ? ইমাম
ইবনে তাইমিয়া লিখেছেন, চোখে দেখার কোন প্রমাণ পাওয়া যায়নি, কোন সাহাবী একথা বর্ণনাও করেননি। আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) চোখ এবং অন্তর দ্বারা দেখার
যে কথা উল্লেখ রয়েছে, তার মধ্যে প্রথম বর্ণনা দ্বিতীয় বর্ণনার বিপরীত নয়। ইমাম ইবনে কাইয়েম যে নৈকট্য এবং নিকটতর হওয়ার হওয়ার কথা উল্লেখ করেছেন,
এটি মেরাজের সময়ের চেয়ে ভিন্ন সময়ের কথা। সূরা নাজম এ হযরত জিব্রাঈল (আঃ) এর নৈকট্যের কথা উল্লেখ রয়েছে। হযরত আয়েশা (রাঃ) সেই কথাই বর্ণনা করেছেন।
পক্ষান্তরে মে’রাজের হাদিসে যে নৈকট্যের কথা বলা হয়েছে, সে সম্পর্কে ব্যাখ্যা হচ্ছে এই যে, এটা আল্লাহরই নৈকট্য। সূরা নাজম এ সম্পর্কে কোন ব্যাপক
আলোচনা নেই। বরং সেখানে বলা হয়েছে, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে দ্বিতীয়বার “ সেদরাতুল মুনতাহা”র কাছে দেখেছেন। যাঁকে দেখেছেন তিনি জিব্রাঈল
(আঃ)। নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম হযরত জিব্রাঈল (আঃ) কে তার আসল চেহারায় দু’বার দেখেছেন। একবার পৃথিবীতে দ্বিতীয়বার “সেদরাতুল মুনতাহা’র
কাছে।
এ সময়েও প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর “শাককুস সদর” বা সিনাচাকের ঘটনা ঘটেছিল। এ সফরের সময় তাকে কয়েকটি জিনিস দেখানো হয়েছিল। তাঁকে দুধ
এবং মদ দেয়া হয়েছিল। তিনি দুধ গ্রহণ করলেন। এটা দেখে হযরত জিব্রাইল (আঃ) বললেন, আপনাকে ফেতরাত বা স্বভাবের ফল দেখানো হয়েছে। যদি আপনি মদ গ্রহণ
করতেন তবে আপনার উম্মত পথভ্রষ্ট হয়ে যেত।
আল্লাহর রসুল সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম চারটি নহর দেখলেন। চারটি যাহেরী, আর চারটি বাতেনী। প্রকাশ্য নহর ছিল নীল এবং ফোরাত। এর তাৎপর্য সম্ভবত এই
যে, তার রেসালাত নীল এবং ফোরাত সজীব এলাকা সমূহে বিস্তার লাভ করবে। অর্থ্যাৎ এখানের অধিবাসিরা বংশ পরস্পরায় মুসলমান হবে। এমন নয় যে, এ দুটি নহরের পানির
উৎস জান্নাতে রয়েছে।
জাহান্নামের দারোগা মালেককে তিনি দেখলেন, তিনি হাসেন না, তার চেহারায় হাসি খুশির কোন ছাপও নেই। আল্লাহর রসুলকে বেহেশত ও দোজখ দেখানো হল।
এতিমের ধন-সম্পদ যারা অন্যায়ভাবে আত্মসাৎ করে, নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে তাদের অবস্থাও দেখানো হলো। তাদের ঠোঁট ছিলো উঁটের ঠোটের মত।
তারা নিজেদের মুখে পাথরের টুকরার মত মত অঙ্গার প্রবেশ করাচ্ছে আর সেই অঙ্গার তাদের গুহ্যদ্বার দিয়ে বেরিয়ে যাচ্ছে।
নবী করিম সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সুদখোরদেরও দেখেছিলেন । তাদের ঠোঁট এতবড় ছিল যে, তারা নাড়াচাড়া করতে পারছিল না। ফেরাউনের অনুসারীদের
জাহান্নামে নেয়ার সময় তারা এসব সুদখোরকে মাড়িয়ে যাচ্ছিল।
যেনা কারীদেরও তিনি দেখেছিলেন। তাদের সামনে তাজা গোশত এবং দুর্গন্ধময় পঁচা গোশত ছিল, অথচ তারা তাজা গোশত রেখে পঁচা গোশত খাচ্ছিল।
যেসব নারী স্বামী থাকা সত্তেও নিজ গর্ভে অণ্যের সন্তার ধারন করেছিল, প্রিয় নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাদেরও দেখেছিলেন। নবী সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম লক্ষ্য করলেন যে, ওই সব মহিলার বুকে বড় বড় কাঁটা বিধিয়ে শুন্যে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছে।
তিনি মক্কার একটি কাফেলাকে দেখেছিলেন। সেই কাফেলার একটি উট পালিয়ে গিয়েছিলতিনি তাদেরকে সেই উটের সন্ধান বলে দিয়েছিলেন। ঢেকে রাখা পাত্রে পানি ছিলো,
তিনি সেই পানি থেকে পান করেছিলেন। সে সময় কাফেররা সকলে ঘুমাচ্ছিল। মেরাজের রাতের পরদিন সকালে এই বিবরণ তাঁর দাবীর সত্যতার একটি প্রমাণ হয়েছিলো।
বলে দিলেন অমুক সময়ে সে কাফেলা ফিরে আসবে। কাফেলা থেকে পালিয়ে যে উটটি মক্কায় ফিরে আসছিলো তিনি সে উটটির বিবরণও পেশ করলেন। পরবর্তী সময়ে তাঁর সব
কথাই সত্য প্রমাণিত হয়। কিন্ত এতকিছু সত্তেও কাফেরদের ঘৃনা আরও বেড়ে গেল এবং তারা তাঁর কথা মেনে নিতে অস্বীকৃতি জানালো।
বলা হয়, হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রাঃ) কে নবীজি সেই সময় সিদ্দিক উপাধি দিয়েছিলেন। কেননা অন্য সবাই যখন অবিশ্বাস করছিলো, তিনি তখন সব কিছুই বিশ্বাস
করেছিলেন।
মেরাজের বিবরণ আল্লাহ তাআলা কোরআনুল করিমে উল্লেখ করেছেন।
নবীদের ব্যাপারে এটাই হচ্ছে আল্লাহর সুন্নত। আল্লাহ তাআলা বলেন,”এবং এভাবেই আমি ইব্রাহিমকে আসমান জমিনের রাজ্য ব্যবস্থাপনা দেখিয়েছি যাতে,
সে বিশ্বাসীদের অর্ন্তভুক্ত হয়ে যায়।“
আল্লাহ তাআলা হযরত মুসা (আঃ) কে বলেছিলেন, “তাহলে আমি তোমাকে আমার বড় কিছু নিদর্শন দেখাব।“
এসব দেখানোর উদ্দেশ্য হচ্ছে, তারা যেন বিশ্বাস স্থাপন করতে পারে। এ কথাও আল্লাহ তাআলা বলে দিয়েছেন। নবীরা আল্লাহ তাআলার নিদর্শন সরাসরি প্রত্যক্ষ করায়
তাদের বিশ্বাস আরো দৃঢ় হয়। ফলে তারা আল্লাহর পথে মানুষকে দাওয়াত দিতে গিয়ে এমন সব দুঃখ এবং কষ্ট নির্যাতন নিপীড়ন সহ্য করতে পারেন, যা অন্য
কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাদের দৃষ্টিতে পার্থিব জগতের যাবতীয় শক্তিই মনে হয় তুচ্ছ। এ কারণে তারা কোন শক্তিকেই পরোয়া করেন না। মেরাজের ঘটনায় ছোট খাট বিষয়
এবং এ ঘটনার প্রকৃত রহস্য সম্পর্কে শরীয়তের বড় বড় কিতাবে আলোচনা রয়েছে। তা হতে প্রধান প্রধান কয়েকটি বিষয় এখানে উল্লেখ করা হচ্ছে।
এখানে লক্ষ্য করার বিষয় এই যে, আল্লাহ তাআলা কোরআনে মাত্র একটি আয়াতে মেরাজের ঘটনা উল্লেখ করেই ইহুদিদের দুস্কৃতির কথা বর্ণনা করেছেন। এরপর তাদের
জানিয়েন যে, এই কোরআন সেই পথেরই হেদায়াত দিয়ে থাকে, যে পথ সঠিক এবং সরল। কোরআন পাঠকারীদের মনে হতে পারে যে, উভয় কথা সম্পর্কহীন, কিন্ত
আসলে তা নয়। আল্লাহ তাআলা তাঁর বর্ণনা ভঙ্গিতে এই ইশারাই দিয়েছেন যে, এখন থেকে ইহুদিদের মানব জাতির নেতৃত্বের আসন থেকে সরিয়ে দেয়া হবে। কেননা এসব
ইহুদী এমন ভয়াবহ অপরাধ করেছে যে, নেতৃত্বের যোগ্যতা তাদের আর নেই। কাজেই এই দায়িত্ব ও মর্যাদা এখন থেকে মহা নবী সাল্লালাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে প্রদান
করা হবে এবং দুঃসাহসী দাওয়াতের উভয় কেন্দ্রকে তাঁর নিয়ন্ত্রানাধীন করা হবে। জুলুম, অত্যাচার এবং বিশ্বাসঘাতকতায় কলন্কিত ইতিহামের অধিকারী একটি উম্মতের কাছ
থেকে নেতৃত্ব কেড়ে নিয়ে এমন একটি উম্মতকে দেয়া হবে, যাদের মাধ্যমে কল্যাণের ঝর্ণাধারা উৎসারিত হবে। এই উম্মতের পয়গম্বর ওহীর মাধ্যমে কোরআনে করিম
পেয়েছেন। এই কোরআন মানব জাতিকে সর্বাধিক হেদায়েত দান করেছে।
কিন্ত এই নেতৃত্বের পূর্ণতা কিভাবে সাধিত হবে ? ইসলামের নবীতো মক্কার পাহাড়ে লোকদের কাছে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। এটি একটি প্রশ্ন। এই প্রশ্ন অন্য একটি সত্যের
পর্দা উম্মোচন করেছে। ইসলামের দাওয়াত একটা পর্যায় অতিক্রম করার কাছে পৌঁছেছে, বর্তমানে অণ্য একটি পর্য়ায় প্রবেশ করবে। এই ধারেআ হবে অন্য
ধারা থেকে ভিন্ন। এ কারণে দেখা যায় যে, কোন কোন আয়াতে পৌত্তলিকদের সুস্পষ্ট ভাষায় সতর্ক করে দেয়া হয়েছে এবং কঠোর হুমকি দেয়া হয়েছে।আল্লাহ
তাআলা বলেন, আমি যখন কোন জনপদ ধ্বংস করতে চাই, তখন তার সমৃদ্ধ ব্যক্তিদের সৎকাজ করতে আদেশ করি, কিন্ত তারা সেখানে অসৎ কাজ করে। তারপর তাদের
প্রতি দন্ড প্রদান ন্যায় সঙ্গত হয়ে যায় এবং আমি সেটা সম্পুর্ণরুপে বিধ্বস্ত করি। (সূরা বনী ইসরাঈল-১৬)
আল্লাহ তাআলা উক্ত সূরায় আরো বলেন, নূহের পর আমি কত মানব গোষ্টিকে ধ্বংস করেছি। তোমার প্রতিপালক ই তার বান্দাদের পাপাচারের সংবাদ
রাখা এবং পর্যবেক্ষনের জন্য যথেষ্ঠ।(সূরা বনী ইসরাঈল-১৭)
এ সকল আয়াতের পাশাপাশি এমন কিছু আয়াত রয়েছে, যাতে মুসলমানদের ভবিষ্যত ইসলামি সমাজের রুপরেখা তুলে ধরা হয়েছে। তারা এমন এক ভু-খন্ডে নিজেদের
ঠিকানা তৈরী করেছে, যেখানে সব কিছু তাদের নিজের হাতে ন্যস্ত। উল্লেখিত আয়াতে এমন ইশারা রয়েছে যে, আল্লাহর রসুল হযরত মোহাম্মদ সাল্লালাহু
আলাইহি ওয়া সাল্লাম শীঘ্রই এমন নিরাপদ জায়গা পেয়ে যাবেন, যেখানে দ্বীন ইসলাম যথাযথভাবে প্রচার ও প্রসার লাভ করবে।
মেরাজের রহস্যময় ঘটনার এমন সব বিষয় রয়েছে, যার সাথে আমাদের আলোচ্য বিষয়ের সম্পর্ক সরাসরি বিদ্যমান। এ কারণে সেসব বর্ণনা করা দরকার। আমরা এ
সিদ্ধান্তে উপনিত হয়েছি যে, মে’রাজের ঘটনা হয়তো বাইয়াতে আকাবার কিছুকাল আগে ঘটেছিল অথবা প্রথম ও দ্বিতীয় আকাবার মাঝামাঝি সময় ঘটেছিল। আল্লাহ
তাআলাই সব কিছু ভাল জানেন।
0 comments:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন