মার্কেটপ্লেসে যোগ দিলেন, কাজ পেলেন এবং সেটি স¤পূর্ণ করে সাবমিটও করলেন। এবার আপনার আয় ঘরে আনবেন কিভাবে (Money Withdrawal Process)? ফ্রিল্যান্সিং সাইটগুলো কি কি মেথড সাপোর্ট করে সেটা দেখার আগে আমাদের দেখতে হবে আমাদের দেশে বা আমাদের ব্যাংকগুলো কি কি পেমেন্ট মেথড সাপোর্ট করে। যেমন ওডেস্ক এর কথাই ধরি, এখানে মাস্টার কার্ড, পেপাল, স্ক্রিল বা মানিবুকার এবং ডাইরেক্ট ব্যাংক ট্রান্সফার সাপোর্ট করে। এদের মধ্যে পেপাল বাংলাদেশে এখনো চালু হয়নি। তাই বাকি তিনটির যেকোন একটির মাধ্যমেই আপনাকে অর্থ উত্তোলন করতে হবে।

১. স্ক্রিল বা মানিবুকারঃ

স্ক্রিল (Scrill or Moneybookers)শুরু থেকেই নিরাপত্তার ব্যাপারে অত্যন্ত কঠোর এবং সব দিক দিয়েই ঝামেলবিহীন অর্থ উত্তোলন মাধ্যম। এ মাধ্যম দিয়ে অর্থ উত্তোলন করার জন্য আপনাকে ংশৎরষষ.পড়স থেকে একটি অ্যাকাউন্ট তৈরি করতে হবে। খেয়াল রাখবেন, নামের জায়গায় আপনার সার্টিফিকেট নাম ব্যবহার করবেন। কারণ পরে ভেরিফাই করতে হবে ব্যাংকে টাকা তোলার আগে।

কারেন্সি সিলেকশনের জায়গায় ইউএস ডলার ব্যবহার করবেন। অ্যাকাউন্ট তৈরি শেষে এবার ভেরিফাই করার পালা। স্ক্রিল থেকে ভেরিফিকেশন রিকোয়েস্ট পাঠানোর পরে আপনাকে মানিবুকার চিঠি পাঠাবে ঠিকানা ভেরিফাই করার জন্য। চিঠি আসতে ২৫ দিন থেকে একমাস এর মত সময় লাগে। চিঠিতে গোপন কোড লেখা থাকে, সেটি মানিবুকারের নির্দিষ্ট বে ইনপুট করলেই ঠিকানা ভেরিফাইড হয়ে যাবে। এবার ব্যাংক ভেরিফাই করতে হবে। ওডেস্ক, ইল্যান্স বা অন্য কোন ফ্রিল্যান্সিং সাইট থেকে স্ক্রিল এ পেমেন্ট সেন্ড করার পরে তা স্ক্রিল থেকে ব্যাংক এ পাঠাতে হবে। আপনি স্ক্রিল এর প্রোফাইল অপশন এ গিয়ে ব্যাংক এর সুইফট কোড এবং অ্যাকাউন্ট নাম্বার সঠিকভাবে দিলেই ব্যাংকে জমা হয়ে যাবে। এবার কাজ হল স্ক্রিল থেকে অল্প কিছু পরিমাণ ডলার (১৫ ডলার এর নিচে) আপনার ব্যাংক এ পাঠান। প্রথম লেনদেনে টাকা ব্যাংক এ আসতে মাসখানেক সময় লাগতে পারে।

টাকা এলো কি না জানতে নিয়মিত ব্যাংকে খোঁজ রাখুন অথবা ইন্টারনেট এবং মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ব্যালেন্স জানতে পারেন। টাকা চলে আসলে ব্যাংক এ যোগাযোগ করে আপনার অ্যাকাউন্ট এর স্টেটমেন্ট নিয়ে আসুন। এটা অবশ্যই লাগবে। এর পর এটি স্ক্যান করে মানিবুকার এর নিকট পাঠাতে হবে। এটি পাঠানোর জন্য আপনি এই ইমেইল এড্রেস ইউজ করতে পারেন (রহভড়@সড়হবুনড়ড়শবৎং.পড়স) কিংবা স্ক্রিল এ লগইন করে কনট্যাক্ট থেকে তাদের মেইল পাঠাতে পারেন। ব্যাংক এর সকল ইনফরমেশন এবং নাম ঠিক থাকলে দুইদিন থেকে এক সপ্তাহের মধ্যেই আপনার স্ক্রিল ভেরিফায়েড হয়ে যাবে এবং আপনার উইথড্রয়াল লিমিট বেড়ে যাবে। এরপর থেকে আপনি কোন ঝামেলা ছাড়াই ব্যাংক এ টাকা তুলতে পারবেন। সময় লাগবে ১ থেকে ২ দিন!

মাস্টার কার্ড:

পেওনিয়ার (Payoneer)নামে একটি প্রতিষ্ঠান সব ফ্রিল্যান্সারদেরকে একটি করে মাস্টারকার্ড পাঠায় অর্থ লেনদেন করার জন্য। এ কার্ডটি পাওয়ার জন্য আপনি যে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে অ্যাকাউন্ট খুলবেন তা পেমেন্ট অপশন থেকে পেওনিয়ারের কাছে মাস্টারকার্ডের জন্য আবেদন করতে পারবেন। যেমন ওডেস্ক বা ইল্যান্স এর মাধ্যমে আবেদন করতে হলে এখানের ওয়ালেট বা পেমেন্ট অপশন এ গিয়ে মাস্টার কার্ডের জন্য সাইন-আপ করার লিংকে ক্লিক করলেই পেওনিয়ার ডটকম সাইটে নিয়ে যাবে। সেখানে নতুন ব্যবহারকারী হিসেবে আপনি আপনার পূর্ণ নাম ঠিকানা ব্যবহার করবেন। এ সাইটে সাইন আপ করতে পাসপোর্ট বা ন্যাশনাল আইডি কার্ড এর সিরিয়াল নাম্বার দিতে হবে। কোন আবাসিক এলাকার ঠিকানা ব্যবহার করতে হবে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিভার্সিটির ঠিকানা দেয়া যাবে না। সাইন-আপ ফরমে ঠিকানা লেখার সময় ৩০ অক্ষরের মধ্যে রাখতে হবে।

কার্ড হাতে পাবেন দুটো উপায়ে। এক হচ্ছে সাধারণ, এজন্য পেওনিয়ারকে অগ্রিম ২০ ডলার ফি দিতে হবে। তাহলে তাঁরা কার্ড ইস্যু করবে। সাধারণভাবে কার্ড হাতে পেতে এক মাস সময় লাগবে। দ্বিতীয় সিস্টেম হলো ডিএইচএল কুরিয়ার মেথড। এটার মাধ্যমে আপনি চার থেকে পাঁচ দিনের মধ্যেই কার্ড পেয়ে যাবেন। এজন্য অবশ্য ফি গুনতে হবে ৬০ ডলার!

কার্ড হাতে পাওয়ার পর সেটি অ্যাক্টিভেট করতে হবে পেওনিয়ার ওয়েবসাইটে লগ-ইন করে। নিরাপত্তার জন্য পিনকোড দিতে হবে চার ডিজিটের। এরপর কার্ডটি ব্যবহার উপযোগি হয়ে যাবে। তবে আপনাকে আগেই জানিয়ে রাখি, পেওনিয়ার কার্ড দিয়ে টাকা তোলা অনেক খরচের ব্যাপার। যেখানে স্ক্রিল থেকে টাকা তুলতে গেলে আপনার সবমিলিয়ে সাড়ে তিন ডলার খরচ হবে সেখানে পেওনিয়ারে খরচ প্রায় দ্বিগুণ। পেওনিয়ার এ ২০ ডলারের কম উইথড্রয়াল সাপোর্ট করে না। তাই ওডেস্ক বা ইল্যান্স বা অন্য সাইট থেকে উইথড্র করবেন ২০ ডলার বা তার বেশি। উইথড্র করলেই সাথে সাথে কার্ড এ ডলার আসবে না। এটা অনুমোদনের অপেক্ষায় থাকবে দুদিন। এখানে বলা হবে যে আপনি যদি এখনই টাকা নিতে চান তাহলে আপনাকে আড়াই ডলার খরচ করতে হবে। আর যদি তা খরচ করতে না চান তাহলে দুইদিন অপেক্ষা করতে হবে। এখন আপনি যদি আড়াই ডলার খরচ করতে পারেন তাহলে তিন থেকে চার মিনিটের মধ্যে আপনার কার্ড এ ডলার চলে আসবে। আর তা না হলে অপেক্ষা করতেই হচ্ছে!



কার্ডে টাকা জমা হওয়ার পর এবার নিজ হাতে টাকা আনার পালা। এটি যেহেতু মাস্টার কার্ড, তাই দেশের যেকোন ব্যাংকের মাস্টারকার্ড সাপোর্টেড এটিএম বুথ থেকে টাকা তোলা যাবে। ডাচ-বাংলা ব্যাংক, প্রাইম ব্যাংক, ব্র্যাক ব্যাংক, সিটি ব্যাংক এবং স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক সহ বেশ কয়েকটি ব্যাংক মাস্টার কার্ড সাপোর্ট করে।

সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার (Bank Transfer):

ফ্রিল্যান্সিং সাইট থেকে টাকা পাওয়ার জন্য এটি বেশ ঝামেলাবিহীন উপায়। প্রায় সব ফ্রিল্যান্সিং সাইটই সরাসরি ব্যাংক ট্রান্সফার সাপোর্ট করে। ওডেস্ক থেকে টাকা আসতে মাত্র চার থেকে পাঁচ ঘন্টা ব্যাংকিং আওয়ার সময় লাগে। ওয়্যার সিস্টেম যোগ করার জন্য ফ্রিল্যান্সিং সাইটের উইথড্রয়াল মেথড থেকে ওয়্যার ট্রান্সফার সিলেক্ট করে সেখানে ব্যাংকের পরিপূর্ণ তথ্যাদি বসাতে হবে। এখানে প্রয়োজন হবে ব্যাংকের সুইফট কোড, স¤পূর্ণ অ্যাকাউন্ট নাম্বার, ব্যাংকের শাখার পূর্ণ ঠিকানা। এক্ষেত্রে ফ্রিল্যান্সিং সাইটে আপনার নাম ও ব্যাংকে আপনার নাম একই হতে হবে। সবকিছু ঠিক থাকলে আপনার প্রথম ট্রানজেকশন পাঠালে টাকা ব্যাংক এ আসলেই ব্যাংক ভেরিফাই হয়ে যাবে।

ক্রেডিট ঃ মাসুম রানা।

0 comments:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

 
Top